পদ্মার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন, ত্রাণ নয় স্থায়ী সমাধান চান শরীয়তপুরের বাসিন্দারা
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পাইনপাড়া মৌজার হাজী অসিমদ্দিন মাদবরের কান্দি গ্রামের বাসিন্দাদের চোখে এখন শুধুই আতঙ্কের ছাপ। গত ১ আগস্ট রাতে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে বহু পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। পঞ্চম বারের মতো শুরু হওয়া এই ভাঙনে সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। তাদের আকুতি, সাময়িক ত্রাণ নয়, বরং নদীর এই করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে একটি স্থায়ী বাঁধ এবং নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হোক।
গৃহহীন ময়না বেগমের করুণ আর্তি
হাজী অসিমদ্দিন মাদবরের কান্দি গ্রামের বাসিন্দা ময়না বেগম স্বামী ও ১ বছর বয়সী শিশুসন্তানকে নিয়ে পদ্মার তীরে বসবাস করতেন। এবারের ভাঙনে তার বসতঘর সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। কোনোমতে স্বামী, সন্তান এবং একটি মাত্র গরু নিয়ে প্রাণে বাঁচলেও, ঘরের চাল-চুলো কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। এখন প্রতিবেশীর একটি পরিত্যক্ত ঝুপড়ি ঘরে গরুর সঙ্গে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
ময়না বেগম জানান, তারা পদ্মা সেতু প্রকল্পের বেরিবাঁধের পাশে জিরো পয়েন্টে থাকতেন। এ বছর তিনবার ভাঙনের শিকার হয়েছেন। চতুর্থবারের ভাঙনে (১ আগস্ট) রাতে তাদের বসতঘর নদীতে তলিয়ে যায়। কোনো উপায় না দেখে শিশুসন্তান ও স্বামীকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন ময়না। সেই থেকে প্রতিবেশীর বাড়িতে কোনোমতে খাবার জুটছে। রাত কাটছে মশা আর গরুর সঙ্গে। তার একটাই দাবি, ত্রাণ নয়, বরং একটি স্থায়ী সমাধান।
হারুন ও রাহিলার একই গল্প, একই আকুতি
ময়না বেগমের মতোই করুণ পরিণতি ওই গ্রামের হারুন মাদবর ও আমির তালুকদারের পরিবারের। হারুন মাদবরের ছেলে শামসুল হক জানান, ভাঙন শুরু হওয়ার আগেই কোনোমতে বসতঘরটি সরিয়ে রাস্তার ওপর রেখেছেন। বর্তমানে যাযাবরের মতো দিন কাটাচ্ছেন তারা। রাতের বেলায় প্রতিবেশীর রান্নাঘরে আশ্রয় নিতে হয়। তাদেরও একটাই চাওয়া, নিরাপদে বসবাসের জন্য একটি স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা।
আমির তালুকদারের স্ত্রী রাহিলা বেগমের গোয়ালঘর ও রান্নাঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বসতঘরটি কোনোমতে সরিয়ে রাস্তার পাশে রেখেছেন। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে এখন বাৎসরিক খাজনায় জমি খুঁজছেন। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারাও।
প্রশাসনের আশ্বাস, কিন্তু ভরসা পাচ্ছেন না বাসিন্দারা
এই ভাঙন ঠেকাতে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান জানান, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও টিউব ডাম্পিং করা হচ্ছে। তিনি আশ্বাস দেন, আগামী বর্ষার আগেই স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু হবে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করে তাদের সহযোগিতা করা হবে। যারা ভিটেমাটি হারিয়েছেন, তাদের জমিসহ ঘর দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। তিনি আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাসের বন্যা বইলেও, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মনে স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। পদ্মার এই ভাঙন থেকে কবে মুক্তি মিলবে, সে অপেক্ষায় দিন গুনছেন তারা।
0 মন্তব্যসমূহ